1. sajjadmd983@gmail.com : Md Sajjad : Md Sajjad
  2. info@www.maguranewstv.com : NEWS TV : NEWS TV
  3. azimvai50@gmail.com : shohaib azim : shohaib azim
  4. info@www.maguranewstv.com : মাগুরা নিউজ টিভি :
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ন

আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আ. মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ

বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তন এসেছে। আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আ. মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ।

রোববার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক শেখ আঃ মান্নান সাহেবের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত ০৭.০৭.২০২৫ ইং তারিখে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব শেখ আঃ মান্নান সাহেবকে যে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসাবে ১০.০৭.২০২৫ ইং তারিখে কারণ দর্শানের নোটিশ প্রদান করি যার স্মারক নং নারামাবি ১৩২৬/০৭/২৫। উক্ত নোটিশটি প্রধান শিক্ষক জনাব শেখ আঃ মান্নান সাহেব ১৩.০৭.২০১৫ ইং তারিবে গ্রহণ করেন। উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশে নোটিশ গ্রহণ করার তারিখ থেকে ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দেবার কথা। সে অনুযায়ী জবাব দেবার শেষ তারিখ ছিল ২৪.০৭.২০২৫ ইং তারিখ। কিন্তু প্রাণান শিক্ষক শেখ আঃ মান্নান সাহেব উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন ২৭.০৭.২০১৫ ইং তাতিবে বা নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। তদুপরি তার নোটিশের জবাব গ্রহণ করেছি এবং পর্যালোচনা করে প্রতিটি জবাবে বিষয়ে বেবেচনামতো সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

১) নং এর জবাব সন্তোষজনক নয়।

২) নং এর জবাব অগ্রহণযোগ্য। উপরন্ত অনুমোদনহীন, স্বাক্ষরবিহীন ও সৃজনকৃত ভাউচার সমৃদ্ধ সম্পর্কে নিজের অপরাধ ঢাকতে গিয়ে অন্যের উপর দোষ চাপানো হয়েছে যা শিষ্ঠাটার বহির্ভূত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাসের সামিল।

৩) নং এর জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্ত অফিস সহকারী ও অডিট কমিটির উপর দায় চাপানো হয়েছে যা মোটেও সমীচীন নয়।

৪) নং বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন দোকান ঘরের বিষয়ে মামলা যার নং ৬৩/২০২৪ পরিচালনার ব্যাপারে শুধুমাত্র পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদ মামলা পরিচালনার ব্যয় অনুমোদন দিয়েছেন কিন্তু ৭৯/২০২৪ মামলা পরিচালনার ব্যাপারে পরিচালনা পর্যদ কোন প্রকার অনুমোদন দেয়নি। অতএব ৭৯/২০২৪ মামলাটি বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে পরিচালনা করা গ্রহণযোগ্য নয়।

৫) নং বিদ্যালয়ের অর্থ বিধি অনুযায়ী ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা ব্যতীত দুই কর্ম দিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব নং-এ জমা রাখার নিয়ম কিন্তু ব্যাংকে রাখা হয়নি যা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন ও অর্থ আত্মসাতের শামিল।

৬) নং এর জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক বা অন্য কেহ কোনভাবেই অন্য কোন খাতে ব্যয় করতে পারেন না। অন্য খাতে ব্যয় করা হবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

৭) নং এর জবাব মোতাবেক সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব এ.এস.এম রফিকুল আলার কাছ থেকে বর্তমান প্রধান শিক্ষক হিসাব বুঝে পাননি। সুবর্না জামানের নিকট থেকে বর্তমান প্রধান শিক্ষ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন কিন্তু সহকারী শিক্ষক সুবর্না জামানের কাছ থেকে সাবেক প্রধান শিক্ষক এ.এস.এম রফিকুল আলার ছাড়পত্র নেওয়ার সকল কাগজপত্র আয়-ব্যয়ের হিসাব, প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র এবং বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি যেটা প্রধান শিক্ষক অডিট কমিটিকে দেখাতে পারেননি যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৮) নং এর জবাব গ্রহণযোগ্য নয়।

৯) নং বিদ্যালয়ের যে কোন ধরণের দোকান ঘরের চুক্তিপত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকেই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আইনত বাধ্যতামূলক। দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই ঐ সকল কাগজপত্র অন্যান্য তথ্যাদি বুঝে নেওয়া প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পরে। বর্তমান প্রধান শিক্ষকের উপর অর্থিত দায়িত্ব তিনি পালন না করে বিদ্যালয়কে ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন যার দায় দায়িত্ তার উপরই বর্তায়।

১০) নং এর জবাব গ্রহণযোগ্য নয়।

১১। নং অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটিকে যথাসময়ে চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত চলমান অডিট কমিটিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে না যাহা অডিট কমিটিকে অসহযোগিতার শামিল। যার ফলে বিদ্যালয়ের স্বাচ্ছতা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

১২) নং এর জবাবে প্রতীয়মান হয় যে, প্রধান শিক্ষক হিসাবে যথাযথভাবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। জবাবে উল্লেখিত “চেষ্টা করেছেন” শব্দদ্বয় ব্যবহার করা দায়িত্বধীনতার পরিচয় বহন করে।

সিদ্ধান্ত সমূহ ১) অভিযোগের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব শেখ আঃ মান্নান সাহেবকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং কেন তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে সভাপতি বরাবর লিখিত জবাব দেবার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

২) সাময়িক বরখাস্তকালী সময়ে তিনি বিধি মোতাবেক বেতন ভাতাদি প্রাপ্য হবেন।

৩) বিধি মোতাবেক ০৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সভাপতি বরাবর পেশ করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৪) বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব শেখ আঃ মান্নান সাহেবের সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে এবং অভিযোগ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব মুনীর হোসেন সাহেবকে অদ্য ০৯.০৮.২০২৫ ইং তারিখ হতেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

সভায় উপস্থাপিত অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানা গেছে।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে— ব্যাংকে জমা না দিয়ে নগদ অর্থ হাতে রেখে ব্যয় করা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন, দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থতা।

এর আগে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলেও তার লিখিত জবাব “অসন্তোষজনক” বিবেচিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেন আগামী ৩ আগস্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে শেখ আ. মান্নানকে তিন দিনের মধ্যে সকল প্রশাসনিক নথিপত্র, আয়-ব্যয়ের হিসাব ও দাপ্তরিক দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি।”

তবে প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বরখাস্তের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পর্ষদ।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ—মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, যশোর শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসন মাগুরা, উপজেলা প্রশাসন শ্রীপুরসহ মোট ১০টি দপ্তরে সিদ্ধান্তের কপি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ পর্ষদের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানালেও, অন্য অংশের দাবি—ঘটনাটি আরও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি রাখে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© 𝐰𝐰𝐰.𝐠𝐦𝐭𝐯𝟐𝟒.𝐨𝐧𝐥𝐢𝐧𝐞
ওয়েবসাইট ডিজাইন : বাংলাদেশ হোস্টিং